পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী

ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গরুর গোশতের দাম আকাশছোঁয়া। হাড়সহ প্রতি কেজি গোশত বিক্রি হচ্ছে ৬২০ টাকা থেকে ৬৭৫ টাকা। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের গোশতের চাহিদা মেটায় ফার্মের মুরগির গোশত। রাজধানী ঢাকার বাজারগুলোতে এখনো ১৫০ টাকা থেকে ১৭০ টাকা কেজি দরে ফার্মের মুরগির গোশত বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু পোল্ট্রি ফার্মের ব্যবহৃক সব ধরনের কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় ফার্মগুলো টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়ছে। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা কাঁচামারের দাম বেড়ে যাওয়ায় কোন সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে দেশের হাজার হাজার পোল্ট্রি, মৎস্য ও পশুখাদ্যের উৎপাদন। এসব শিল্প বন্ধ হলে দেশে ডিম, দুধ, মাছ ও গোশতের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিবে। ফলে হুমকীর মুখে পড়বে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা।
পোল্ট্রি এবং মৎস্য ও পশুখাদ্যের উৎপাদনের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন,করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাজারে পোল্ট্রি, মৎস্য ও গবাদিপশুর খাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামালের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত দুই বছরে সয়াবিনের দাম ৮৮ শতাংশ বেড়েছে। অন্যান্য কাঁচামালের দর বেড়েছে ১২৩ শতাংশ পর্যন্ত। ইতোমধ্যে বেশ কিছু ছোট ফিড মিল বন্ধ হয়ে গেছে। কাঁচামালের দর সমন্বয় করতে না পারলে ফিড মিলগুলো যে কোন সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ‘বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের’ (বিপিআইসিসি) সভাপতি মসিউর রহমান। তাঁর মতে, এটি একটি সংকটকালীন সময়। একদিকে যেমন দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে হবে অন্যদিকে পুষ্টিকর খাদ্য ডিম, দুধ, মাছ ও মাংসের উৎপাদন ব্যবস্থাকে সচল রাখতে হবে; অন্যথায় ভয়াবহ খাদ্য ও পুষ্টি সংকটে পড়বে দেশ, প্রচুর মানুষ বেকার হয়ে পড়বে।
গতকাল ফিড ইন্ডাষ্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (এফআইএবি) এর নেতৃবৃন্দ এই আশংকা প্রকাশ করেন। সাংবাদিকদের সাথে এক ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভায় এ উদ্বেগের কথা জানান। স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা বলছেন- এমনটি হলে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে দেশে ডিম, দুধ, মাছ ও মাংসের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিবে। ফলে হুমকীর মুখে পড়বে দেশের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা।
এফআইএবি সভাপতি এহতেশাম বি. শাহজাহান বলেন, বিগত কয়েক মাস যাবৎ লোকসান গুনতে থাকা ফিড মিলগুলোর পিঠ এখন দেয়ালে ঠেকেছে। ফিড মিলাররা মনে করেছিলেন কাঁচামালের দর সহনীয় হয়ে আসবে কিন্তু তা হয়নি বরং প্রতিদিনই দাম বাড়ছে। বর্তমানে কাঁচামালসহ মোট উৎপাদন খরচ এতটাই বেড়েছে যে প্রতি কেজি ব্রয়লার ফিডে ৩-৪ টাকা, লেয়ার ফিডে ২.৫০-৩.৫০ টাকা, ক্যাটেল ফিডে ৩.৫০-৪ টাকা, ডুবন্ত ফিস ফিডে ২.৫০-৩.৫০ টাকা এবং ভাসমান ফিস ফিডে ৪-৫ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। তাঁর মতে, বড় বড় ফিড মিলগুলো তাঁদের উৎপাদন ১৫-২০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে; বেশ কিছু ছোট মিল এবং অনেক ব্রয়লার খামার ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে।
এফআইএবি’র সাধারন সম্পাদক মোঃ আহসানুজ্জামান বলেন, ফিড তৈরিতে যে পরিমান খরচ হয় তার প্রায় ৮০ শতাংশই হয় কাঁচামাল ক্রয় বাবদ। ২০২০ সালের মার্চে ভ‚ট্টার দাম ছিল প্রতি কেজি ২৪.১৭ টাকা, চলতি মাসে তা বেড়ে হয়েছে ৩৭টাকা। ৩৭.২৫ টাকার সয়াবিন মিলের দাম এখন ৭০ টাকা। ৩৮.৫০ টাকার ফুল ফ্যাট সয়াবিনের দাম এখন প্রায় ৬৬.৯০ টাকা। ২১.২৫ টাকার রাইস পলিস কিনতে হচ্ছে ৩৬.৩৩ টাকায়। ১৩৩.৩৩ টাকার এল-লাইসিন ২০০ টাকা, ২০০ টাকার ডিএলএম ৩০০ টাকায়, ৫৪ টাকার পোল্ট্রি মিল ৮০ টাকায় এবং ১০০ টাকার ফিস মিল ১৪৬ টাকায় কিনতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ফিড তৈরিতে ৫০-৫৫ শতাংশ ভ‚ট্টা এবং ৩০-৩৫ শতাংশ সয়াবিন মিলের দরকার হয়। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে সয়াবিন মিলের দর ৩০ শতাংশ এবং ভ‚ট্টার দাম ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সয়াবিন তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে ভোজ্য তৈল কোম্পানী ও সীড ক্র্যাশারদের যখন চাপ দেয়া হচ্ছে তখন তাঁরা তেলের দাম কিছুটা কমিয়ে সয়াবিন খৈল বা সয়াবিন মিলের দাম অস্বাভাবিক বাড়িয়ে দিয়েছে। গত বছরের আগস্টে সয়াবিন মিলের দাম ছিল প্রতি কেজি ৫৪ টাকা, চলতি বছরে তা করা হয় ৬০ টাকা, গত ১৬ মার্চে ডিও মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০ টাকায় অথচ ভোজ্য তেল আমদানিতে সরকার ১০ শতাংশ মূসক ছাড় দিয়েছে। দেশের বাজারে সয়াবিন মিলের দাম যে পরিমান বাড়ানো হয়েছে তা আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়েও অনেক বেশি। এফআইএবি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু লুৎফে ফজলে রহিম খান শাহরিয়ার বলেন, কাঁচামালের দর বৃদ্ধিতে ফিড মিলগুলোই যে শুধু বিপাকে পড়েছে তাই নয়; ডিম, দুধ, মাছ ও গোশতের উৎপাদন চেইন ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে এলসি করা থেকে শুরু করে বন্দরে মাল এসে পৌঁছানো পর্যন্ত গড়ে প্রায় ৫০ দিন সময় লাগে; যুক্তরাষ্ট্র থেকে সময় লাগে প্রায় ৭০ দিন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পটভ‚মিতে খাদ্য শষ্যের সরবরাহে বিঘœ সৃষ্টি হয়েছে। ক্রুড অয়েলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় জাহাজ ভাড়া অস্বাভাবিক বেড়েছে, টাকা দিয়েও কিছু কিছু পণ্য পাওয়া যাচ্ছেনা। ডাটা পোর্টাল ইনডেক্স মুন্ডি’র তথ্য অনুযায়ী ভ‚ট্টা ও সয়াবিনের দর সর্বকালের রেকর্ড ছুঁয়েছে।
সংকট উত্তোরনে ২০২৫ সাল পর্যন্ত কর অবকাশ সুবিধার দাবি জানিয়েছেন এফআইএবি কোষাধ্যক্ষ এবং বিপিআইসিসি’র সহ-সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, ২০১৫ সাল পর্যন্ত এ খাতটির জন্য সরকার কর অবকাশ সুবিধা প্রদান করেছিলেন। এক্ষণে সে সুবিধা পুনরায় অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, কৃষির জন্য সরকার নানাবিধ প্রণোদনা ও সুবিধা দিয়ে আসছেন কিন্তু কৃষির বৃহত্তর অংশ হওয়া সত্তে¡ও এ খাতটির জন্য সরকারি কোন প্রণোদনা নেই। আমরা নগদ অর্থ চাই না। আসন্ন জাতীয় বাজেটে পোল্ট্রি, মৎস্য ও পশুখাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত সব ধরনের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানিতে সকল প্রকার আগাম কর (এটি), অগ্রিম আয়কর (এআইটি), উৎস কর (সোর্স ট্যাক্স), মূসক ও শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাচ্ছি।
এফআইএবি’র নব-নির্বাচিত সাধারন সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, কাঁচামালের দাম বৃদ্ধিতে কারসাজি করছেন কিছু ব্যবসায়ী ও আমদানিকারক। কাজেই এদিকেও সরকারের নজর দেয়া দরকার। আন্তর্জাতিক বাজারে দর বৃদ্ধির অজুহাতে দেশীয় বাজারে অযৌক্তিকভাবে কাঁচামালের দর বৃদ্ধি গ্রহণযোগ্য নয়। ২০২৪ সাল নাগাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৩০ সাল নাগাদ জাতিসংঘের এসডিজি অর্জন করতে হলে সবার জন্য সাশ্রয়ী দামে খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করতেই হবে। নজরুল বলেন- সংকট আরও ঘনিভ‚ত হলে পোল্ট্রি, ডেইরি ও মৎস্যখাতের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় ২ কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে; দেশীয় পোল্ট্রি, মৎস্য ও ডেইরিখাত মুখ থুবড়ে পড়বে। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।